মুঘল সম্রাট
মুঘল সাম্রাজ্যেরের শাহেনশাহ | |
---|---|
প্রাক্তন রাজতন্ত্র | |
দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ | |
প্রথম রাজশাসক | বাবর |
শেষ রাজশাসক | দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ |
সম্বোধন | |
দাপ্তরিক আবাস |
|
নিয়োগকর্তা | বংশানুক্রমিক |
রাজতন্ত্রের সূচনা | ২১ এপ্রিল ১৫২৬ (পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ) |
রাজতন্ত্রের সমাপ্তি | ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৫৭ |
বর্তমান ধারক | জাভেদ জাহ বাহাদুর |
মুঘল সম্রাটরা, ১৬ শতকের শুরু থেকে ১৯ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের সম্প্ররসারণ করেন। তাদের সাম্রাজ্য মূলত আধুনিক ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত ছিল। মুঘলরা মধ্য এশিয়ার তৈমুর বংশের উত্তর পুরুষ। এই সাম্রাজ্য ১৮ শতকে দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ শাসকর কর্তৃক ১৮৫৭ সালে সর্বশেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ কে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।[১] মুঘলরা একই সাথে তৈমুর লং এবং চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন। মুঘলদের ভিতরে বেশ কিছু সংখ্যক রাজপুত এবং পারস্যদেশীয় সদস্য ছিল। কারণ অনেক মুঘল সম্রাট পারস্যদেশীয় রাজকন্যা অথবা রাজপুত রাজকন্যাদের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[২][৩] শুধুমাত্র মুঘল সম্রাট বাবর এবং হুমায়ুন ছিলেন প্রকৃত মধ্য এশীয়। আকবর ছিলেন অর্ধেক ইরানি কারণ তার মা ছিলেন পারস্য বংশোদ্ভূত। জাহাঙ্গীর ছিলেন একজন অর্ধ রাজপুত এবং আংশিক পারস্যদেশীয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন এক তৃতীয়াংশ রাজপুত।[৪] তারা ভারতীয় উপমহাদেশের একটি বিরাট অংশ জুড়ে তাদের সাম্রাজ্যর বিস্মৃত ছিল। তাদের সাম্রাজ্যের পরিধি বাংলা থেকে কাবুল এবং পশ্চিমের সিন উত্তরের কাশ্মীর এবং দক্ষিণে কাবেরী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[৫] সেই সময় এই বিশাল এলাকার জনসংখ্যা ছিল ১১০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন। এই জনসংখ্যা তখনকার পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ। মুঘল সম্রাট সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল ৪ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার অথবা ১.২ মিলিয়ন বর্গ মাইল। [৬]
মুঘল সাম্রাজ্য
[সম্পাদনা]প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর তার পিতার দিক থেকে সরাসরি তৈমুর লং এর বংশধর ছিলেন। এবং মাতার দিক থেকে তিনি চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন। [৭] বাবর মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার পিতার রাজ্য থেকে সেহবাণী খান কর্তৃক বিতাড়িত হবার পর ভারতে আগমন করেন। ১৫২৬ সালে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে জয় লাভ করার পর বাবর ভারতে তার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।[৭] বাবরের পুত্র হুমায়ূনের সময় সাম্রাজ্যের অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পড়ে। বিদ্রোহীরা তাকে ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করে। তিনি পারস্যে পলায়ন করেন।[৭] ইরানের হুমায়ুনের নির্বাসিত সময় পশ্চিম এশীয় সংস্কৃতির সাথে মুঘল দরবারে একটি যোগসূত্র স্থাপিত হয়। ১৫৫৫ সালে হুমায়ুন যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে ভারতে তার সাম্রাজ্যঃ পুনরুদ্ধার করেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই তিনি একটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় মারা যান।[৭] সম্রাট হুমায়ুনের শিশুপুত্র আকবর, বৈরাম খান নামে একজন উজিরের তত্বাবধানের সিংহাসনে আরোহণ করেন। সম্রাট বাবর এর আমলে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য সু সংঘটিত হয়।[৭] তিনি ভারতের একটি অনুগত সামরিক অভিজাত শ্রেণী তৈরী করতে পেরেছিলেন এবং একটি আধুনিক সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিলেন। বাবর এর আমলে ভারতে সাংস্কৃতিক বিকাশক ত্বরান্বিত হয়েছিল।[৭] একইসাথে আকবর ইউরোপীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ব্যবসা বৃদ্ধি করেছিলেন। আব্রাহাম ইরানি নামে একজন ভারতীয় ঐতিহাসিক উল্লেখ করেন সেসময় বিদেশিরা মুঘল সাম্রাজ্যের জাঁকজমকপূর্ণ ঐশ্বর্য দেখে মুগ্ধ হত। সে সময় জাতীয় সম্পদের এক চতুর্থাংশের মালিক ছিল মাত্র ৬৫৫ টি পরিবার। যখন ভারতের ১২০ মিলিয়ন জনসংখ্যা একটি বড় অংশ দারিদ্র্যে নিমজ্জিত ছিল।[৮] ১৫৭৮ সালে আকবর বাঘ শিকার করতে গিয়ে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধারণা করা হয় তিনি মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সেই সময় ইসলাম ধর্মে তার মোহমুক্তি ঘটে। তিনি হিন্দু এবং ইসলাম ধর্মের মিশ্র একটি ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।[৯] আকবর ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং দ্বীন-ই-ইলাহী নাম একটি নতুন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন।[৭]
আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীর মোগল সাম্রাজ্যকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যায়। তিনি আফিমে আসক্ত ছিলেন। মাঝেমধ্যে তিনি রাষ্ট্রীয় কাজে উদাসীনতার পরিচয় দিতেন। এক পর্যায়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হন।[৭] জাহাঙ্গীরের পুত্র সম্রাট শাহজাহানের আমলে মুঘলরা অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাজমহল সেসময়কার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।[৭] সে সময় সরকারের ব্যয়, আয় এর চাইতে অনেক বেশি ছিল।[৭]
১৬৫৮ সালে শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারাশিকো রাজ শাসকের প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতায় আরোহণ করে। শাহজাহানের অপর পুত্র আওরঙ্গজেব কিছু ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীর সহায়তায় দিল্লির সিংহাসন দখল করেন। ১৬৫৯ সালে আওরঙ্গজেব তার ভাইকে যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।[৭] যদিও শাহজাহান তখন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন, তথাপি আওরঙ্গজেব তাকে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে রাজকার্য পরিচালনা করার অযোগ্য ঘোষণা করে তাকে গৃহবন্দী করে রাখেন।
আরঙ্গজেব এর আমলে মুঘল সাম্রাজ্য রাজনৈতিকভাবে সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী থাকলেও ধর্মীয় বিভেদ মুঘল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব কে অনিশ্চিত করে তোলে।[৭] আরঙ্গজেব দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব অঞ্চলেই মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ১৭০৭ সালে তার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়।[৭] আরঙ্গজেব তার পূর্বপুরুষের রাজ্য মধ্য এশিয়ার তুরান জয় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাতে সফল হননি। আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য বিজয়ের অভিযানে জয়লাভ করলেও যুদ্ধে প্রচুর লোকবল ও সম্পদ ক্ষয় হয়।[১০] আরঙ্গজেব এর জন্য আরেকটি সমস্যা ছিল যে তার সেনাবাহিনীর ভিত্তি ছিল মূলত উত্তর ভারতের অভিজাত শ্রেণী তারাই অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ ও অশ্বারোহী বাহিনী সরবরাহ করত। অটোমান সাম্রাজ্যের মত কোন জেনিসারি বাহিনী মুঘলদের ছিল না।[১১] দীর্ঘ দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধ আরঙ্গজেব এর অন্যান্য সফলতা কে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছিল। ১৭ শতকের শেষে অভিজাত শ্রেণী মুঘল সম্রাটদের অভিযানে সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য রসদ সরবরাহ করতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়ে। এর কারণ হলো অভিযানের সফলতার পর ভূসম্পত্তি এবং অন্যান্য সম্পত্তি প্রাপ্তির যে সম্ভাবনা তা ধীরে ধীরে কমে আসছিল।[১২] আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহ আলম তার পিতার ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পরিহার করে প্রশাসনে একটি সংস্কার আনতে সচেষ্ট হন। ১৭১৯ সালে তার মৃত্যুর পর সমগ্র মুঘল সাম্রাজ্য এক বিশৃংখল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। পরপর চারজন সম্রাট সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।[৭]
সম্রাট মোহাম্মদ শাহ এর শাসন আমলে মুঘল সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন শুরু হয়। মধ্য ভারতের একটি বিরাট অংশ মুঘলদের হাতছাড়া হয়ে মারাঠাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। একটি এলাকার সামরিক নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য মুঘলরা সবসময় একটি কৌশল অবলম্বন করতো। তারা এলাকার একটি দুর্গ দখল করতো এবং সেটি কে কেন্দ্র রূপে ব্যবহার করে আশেপাশের শত্রু সেনাদের প্রতিহত করত। মুঘলরা খোলা যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর মোকাবেলা করে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে বেশি পারদর্শী ছিল। এই কৌশলটি ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল।[১০] অপরদিকে হিন্দু মারাঠারা সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হতো না। বরং তারা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে এম্বুস এবং ছোটখাটো আক্রমণের মাধ্যমে মুঘল বাহিনীর রসদ সরবরাহ কে পর্যুদস্ত করতো। মারাঠারা কুখ্যাত লুটেরা ছিলো। তারা দ্রুত শত্রুপক্ষ ও তাদের রাজ্য লুটপাত করতো। [১০] মারাঠাদের উপযুক্ত গোলন্দাজ বাহিনী এবং অশ্বারোহী সেনাবাহিনী না থাকায় তারা সরাসরি মুঘলদের দুর্গ আক্রমণ করত না। মুঘলদের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ সরবরাহে বাধা প্রদান ও তা ধ্বংস করে দুর্গে অবস্থানরত মুঘল সেনাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতো।[১০] মুঘল সেনাপতিরা মারাঠাদের এই যুদ্ধ কৌশলের বিরুদ্ধে পাল্টা কোন কৌশল গ্রহণ না করায় ক্রমেই মধ্য ভারতের অনেক এলাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। পারস্য সম্রাট সম্রাট নাদির শাহের ভারত অভিযানের পর মুঘল সাম্রাজ্যের শক্তি এবং গৌরব অনেকটাই কমে আসে।[৭] অনেক সামন্ত শাসকরা স্বাধীনভাবে তাদের রাজ্য শাসন করতে থাকে। যদিও শুধু মুসলিম অভিযাত্রায় নয়, মারাঠা হিন্দু এবং শিখ নেতৃবৃন্দ মুঘল সম্রাটকে ভারতের আনুষ্ঠানিক সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে মেনে চলত। [১৩]
পরবর্তী দশকে আফগান, শিখ এবং মারাঠারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা রক্ষা করতে ব্যর্থ চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত তাকে বাইরের শক্তির দ্বারস্থ হতে হয়। ১৭৮৪ সালে মারাঠারা দিল্লীর সালতানাতের পরিরক্ষাকারি হিসাবে ঘোষিত হয়। দ্বিতীয় অ্যাংলো মারাঠা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত এই ব্যবস্থা বজায় থাকে। এরপরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দিল্লির মুঘল বংশের পরিরক্ষাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়।[১৩] তখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রাক্তন মুঘল সাম্রাজ্যের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করতো। ১৮৫৭-৫৮ সালের সিপাহী বিপ্লব ব্যর্থ হলে, ব্রিটিশ সরকার শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহকে সিংহাসনচ্যুত করে এবং রেঙ্গুনে নির্বাসিত করে। সেই সাথে বিলুপ্ত হয় মুঘল সাম্রাজ্যের।[৭]
মুঘল সম্রাটদের তালিকা
[সম্পাদনা]পোর্ট্রেট | অলংকারিক নাম | জন্ম নাম | জন্ম | শাসনকাল | মৃত্যু | টীকা |
---|---|---|---|---|---|---|
বাবর بابر |
জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ ظہیر الدین محمد |
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৪৮৩ | ৩০ এপ্রিল ১৫২৬ – ২৬ ডিসেম্বর ১৫৩০ | ২৬ ডিসেম্বর ১৫৩০ (৪৭ বছর) | বাবা ও মায়ের দিক থেকে যথাক্রমে তৈমুর লং ও চেঙ্গিস খানের বংশধর। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে বাবর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। | |
হুমায়ুন ہمایوں |
নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ نصیر الدین محمد ہمایوں |
১৭ মার্চ ১৫০৮ | ২৬ ডিসেম্বর ১৫৩০ – ১৭ মে ১৫৪০ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি ১৫৫৫ - ২৭ জানুয়ারি ১৫৫৬ | ২৭ জানুয়ারি ১৫৫৬ (৪৭ বছর) | সুরি সম্রাট শের শাহ সুরির হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন। ১৫৫৫ সালে পুনরায় ক্ষমতাদখলে সক্ষম হন। এর অল্পকাল পর দুর্ঘটনায় মারা যান। | |
আকবর-এ-আজম اکبر اعظم |
জালালউদ্দিন মুহাম্মদ جلال الدین محمد اکبر |
১৪ অক্টোবর ১৫৪২ | ২৭ জানুয়ারি ১৫৫৬ – ২৭ অক্টোবর ১৬০৫ | ২৭ অক্টোবর ১৬০৫ (৬৩ বছর) | আকবর ও বৈরাম খান পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে হিমুকে পরাজিত করেন। চিতোরগড় অবরোধে আকবর সফল হন। আকবর সাম্রাজ্যকে বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করেন এবং মুঘল শাসকদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিবেচিত হন। রাজপুত রাজকন্যা মরিয়ম উজ জামানিকে আকবর বিয়ে করেছিলেন। লাহোর দুর্গ আকবরের সময় নির্মিত অন্যতম বিখ্যাত স্থাপনা।তিনি দ্বীন-ই-ইলাহি ধর্মের প্রবর্তক। | |
জাহাঙ্গীর جہانگیر |
নূরউদ্দিন মুহাম্মদ সেলিম نور الدین محمد سلیم |
২০ সেপ্টেম্বর ১৫৬৯ | ১৫ অক্টোবর ১৬০৫ – ৮ নভেম্বর ১৬২৭ | ৮ নভেম্বর ১৬২৭ (৫৮ বছর) | মুঘল সম্রাটদের মধ্যে জাহাঙ্গীর সর্বপ্রথম পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি মদ্যপ ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী নূর জাহান এসময় মূল ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেন। | |
শাহজাহান-এ-আজম شاہ جہان اعظم |
শাহাবুদ্দিন মুহাম্মদ খুররম شہاب الدین محمد خرم |
৫ জানুয়ারি ১৫৯২ | ৮ নভেম্বর ১৬২৭ – ২ আগস্ট ১৬৫৮ | ২২ জানুয়ারি ১৬৬৬ (৭৪ বছর) | শাহজাহানের যুগে মুঘল শিল্প ও স্থাপত্য সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌছায়। তিনি তাজমহল, দিল্লি জামে মসজিদ, লালকেল্লা, জাহাঙ্গীরের মাজার, শালিমার বাগান নির্মাণ করেছেন। | |
আলমগীর عالمگیر |
মুহিউদ্দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব محی الدین محمداورنگزیب |
৪ নভেম্বর ১৬১৮ | ৩১ জুলাই ১৬৫৮ – ৩ মার্চ ১৭০৭ | ৩ মার্চ ১৭০৭ (৮৮ বছর) | আওরঙ্গজেব শরিয়া আইনের প্রচলন পুনরায় শুরু করেন। ফতোয়া-ই-আলমগীরি নামক আইন সংকলন তার সময় প্রণীত হয়। গোলকুন্ডা সালতানাতের হীরার খনি তিনি জয় করেছিলেন। জীবনের শেষ ২৭ বছরের অধিকাংশ সময় আওরঙ্গজেব বিদ্রোহী মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত ছিলেন। তার শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্যের সীমানা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায়। ব্যাপক বিস্তৃত সাম্রাজ্য মনসবদারদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হত। তার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্য বিভিন্ন দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। নিজের হাতে কুরআন লিপিবদ্ধ করার জন্য আওরঙ্গজেব অধিক পরিচিত। দক্ষিণাত্যে মারাঠাদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় তিনি মারা যান। | |
আজম শাহ اعظم شاہ |
কুতুবউদ্দিন মুহাম্মদ مرزا محمد معظم |
২৮ জুন ১৬৫৩ | ১৪ মার্চ ১৭০৭ – ৮ জুন ১৭০৭ | ৮ জুন ১৭০৭ (৫৩ বছর) | ||
প্রথম বাহাদুর শাহ پہلے بہادر شاہ প্রথম শাহ্ আলম پہلے شاہ عالم |
মির্জা মুহাম্মদ মুয়াজ্জম قطب الدین محمد |
১৪ অক্টোবর ১৬৪৩ | ১৯ জুন ১৭০৭ – ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৭১২ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৭১২ (৬৮ বছর) | তিনি মারাঠাদের সাথে সমঝোতা করেন, রাজপুতদের শান্ত করেন এবং পাঞ্জাবের শিখদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থানে আসেন। | |
জাহানদার শাহ جہاندر شاہ |
মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ معین الدین محمد |
৯ মে ১৬৬১ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৭১২ – ১১ ফেব্রুয়ারি ১৭১৩ | ১২ ফেব্রুয়ারি ১৭১৩ (৫১ বছর) | ||
ফররুখসিয়ার فرخ سیار |
মুইনউদ্দিন মুহাম্মদ معیز الدین محمد |
২০ আগস্ট ১৬৮৫ | ১১ জানুয়ারি ১৭১৩ – ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৭১৯ | ২৯ এপ্রিল ১৭১৯ (৩৩ বছর) | ১৭১৭ সালে একটি ফরমানের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে শুল্ক ছাড়া বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি দেন। সৈয়দ ভাইরা তার সময়ে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠে। | |
রাফি উল-দারজাত رفیع الدراجات |
শামসউদ্দিন মুহাম্মদ رفیع الدین محمد |
৩০ নভেম্বর ১৬৯৯ | ২৮ ফেব্রুয়ারি – ৬ জুন ১৭১৯ | ৯ জুন ১৭১৯ (১৯ বছর) | ||
দ্বিতীয় শাহজাহান شاہ جہاں ثانی |
রাফি-উদ্দিন মুহাম্মদ شمس الدین محمد |
জুন ১৬৯৬ | ৬ জুন ১৭১৯ – ১৯ সেপ্টেম্বর ১৭১৯ | ১৯ সেপ্টেম্বর ১৭১৯ (২৩ বছর) | ---- | |
মুহাম্মদ শাহ محمد شاہ |
নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ مجاہد الدین محمد |
১৭ আগস্ট ১৭০২ | ২৭ সেপ্টেম্বর ১৭১৯ – ২৬ এপ্রিল ১৭৪৮ | ২৬ এপ্রিল ১৭৪৮ (৪৫ বছর) | সৈয়দ ভাইদের হাত থেকে নিস্কৃতি পান। মারাঠাদের সাথে দীর্ঘ লড়াইয়ে দক্ষিণাত্য ও মালওয়া হারান। শাসনামলে নাদির শাহের আক্রমণ হয়। সাম্রাজ্যের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম শেষ সম্রাট। | |
আহমেদ শাহ বাহাদুর احمد شاہ بہادر}} |
মুজাহিদউদ্দিন মুহাম্মদ ناصر الدین محمد |
২৩ ডিসেম্বর ১৭২৫ | ২৬ এপ্রিল ১৭৪৮ – ২ জুন ১৭৫৪ | ১ জানুয়ারি ১৭৭৫ (৪৯ বছর) | সিকান্দারাবাদের যুদ্ধে মারাঠাদের বিপক্ষে মুঘলদের পরাজয় | |
দ্বিতীয় আলমগীর عالمگیر ثانی |
আজিজউদ্দিন মুহাম্মদ عزیز الدین محمد |
৬ জুন ১৬৯৯ | ২ জুন ১৭৫৪ – ২৯ নভেম্বর ১৭৫৯ | ২৯ নভেম্বর ১৭৫৯ (৬০ বছর) | উজির গাজিউদ্দিন খান ফিরোজ জঙের আধিপত্য | |
তৃতীয় শাহজাহান شاہ جہاں سوم |
মুহিউল মিল্লাত محیۃ ملت |
১৭১১ | ১০ ডিসেম্বর ১৭৫৯ – ১০ অক্টোবর ১৭৬০ | ১৭৭২ | ||
দ্বিতীয় শাহ আলম شاہ عالم ثانی |
জালালউদ্দিন মুহাম্মদ আলি গওহর جلال الدین محمد علی گوہر |
২৫ জুন ১৭২৮ | ১০ অক্টোবর ১৭৬০ – ৩১ জুলাই ১৭৮৮ এবং ১৬ অক্টোবর ১৭৮৮ - ১৯ নভেম্বর ১৮০৬ | ১৯ নভেম্বর ১৮০৬ (৭৮ বছর) | মারাঠারা তাকে মুঘল সম্রাট হিসেবে মেনে নেয়।[১৪] পরে ১৭৬১ সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের পর আহমেদ শাহ দুররানি কর্তৃক ভারতের সম্রাট স্বীকৃত হন।[১৫] ১৭৬৪ সালে মুঘল সম্রাট, আওধের নবাব এবং বাংলা ও বিহারের নবাবের সম্মিলিত শক্তি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হয়। যুদ্ধে পরাজয়ের পর দ্বিতীয় শাহ আলম এলাহাবাদের উদ্দেশ্যে দিল্লি ত্যাগ করেন। এলাহাবাদের চুক্তির মাধ্যমে হানাহানি বন্ধ হয়। ১৭৭২ সালে মারাঠা নিরাপত্তায় তাকে মুঘল সিংহাসনে বসানো হয়।[১৬] তার শাসনামলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় মুঘল নিজামত বিলুপ্ত করে। | |
চতুর্থ শাহজাহান جہاں چہارم |
বিদার বাখত মাহমুদ শাহ বাহাদুর জাহান শাহ بیدار بخت محمود شاہ بہادر جہاں شاہ |
১৭৪৯ | ৩১ জুলাই ১৭৮৮ – ১১ অক্টোবর ১৭৮৮ | ১৭৯০ (৪০-৪১ বছর) | ||
দ্বিতীয় আকবর শাহ شاہ ثانی |
মুইনউদ্দিন মুহাম্মদ معین الدین محمد |
২২ এপ্রিল ১৭৬০ | ১৯ নভেম্বর ১৮০৬ – ২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৩৭ | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৩৭ (৭৭ বছর) | ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের পর দ্বিতীয় আকবর শাহ ব্রিটিশ পেনশনভোগী হয়ে পড়েন। ব্রিটিশ নিরাপত্তায় তিনি আনুষ্ঠানিক প্রধান ছিলেন। | |
দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ شاہ ثانی |
আবু জাফর সিরাজউদ্দিন মুহাম্মদ ابو ظفر سراج الدین محمد |
২৪ অক্টোবর ১৭৭৫ | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৩৭ – ১৪ সেপ্টেম্বর ১৮৫৭ (১৯ বছর ৩৫১ দিন) | ৭ নভেম্বর ১৮৬২ | শেষ মুঘল সম্রাট। সিপাহী বিদ্রোহের পর তাকে বন্দী করে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেয়া হয়। এর মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে। তিনি রেঙ্গুনে মারা যান। |
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Spear 1990, পৃ. 147–148
- ↑ Jeroen Duindam (2015), Dynasties: A Global History of Power, 1300–1800, page 105, Cambridge University Press
- ↑ Mohammada, Malika (জানুয়ারি ১, ২০০৭)। The Foundations of the Composite Culture in India। Aakar Books। পৃষ্ঠা 300। আইএসবিএন 978-8-189-83318-3।
- ↑ Dirk Collier (২০১৬)। The Great Mughals and their India। Hay House। পৃষ্ঠা 15।
- ↑ Chandra, Satish। Medieval India: From Sultanate To The Mughals। পৃষ্ঠা 202।
- ↑ Richards, John F. (জানুয়ারি ১, ২০১৬)। Johnson, Gordon; Bayly, C. A., সম্পাদকগণ। The Mughal Empire। The New Cambridge history of India: 1.5। I. The Mughals and their Contemporaries। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 1, 190। আইএসবিএন 978-0521251198। ডিওআই:10.2277/0521251192।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত Berndl, Klaus (২০০৫)। National Geographic visual history of the world। University of Michigan। পৃষ্ঠা 318–320। আইএসবিএন 978-0521522915।
- ↑ Eraly, Abraham The Mughal Throne The Sage of India's Great Emperors, London: Phonenix, 2004 page 520.
- ↑ Eraly, Abraham The Mughal Throne The Sage of India's Great Emperors, London: Phonenix, 2004 page 191.
- ↑ ক খ গ ঘ D'souza, Rohan "Crisis before the Fall: Some Speculations on the Decline of the Ottomans, Safavids and Mughals" pages 3-30 from Social Scientist, Volume 30, Issue # 9/10, September–October 2002 page 21.
- ↑ D'souza, Rohan "Crisis before the Fall: Some Speculations on the Decline of the Ottomans, Safavids and Mughals" pages 3-30 from Social Scientist, Volume 30, Issue # 9/10, September–October 2002 page 22.
- ↑ D'souza, Rohan "Crisis before the Fall: Some Speculations on the Decline of the Ottomans, Safavids and Mughals" pages 3-30 from Social Scientist, Volume 30, Issue # 9/10, September–October 2002 pages 22-23.
- ↑ ক খ Bose, Sugata Bose; Ayesha Jalal (২০০৪)। Modern South Asia: History, Culture, Political Economy। Routledge। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 978-0203712535।
- ↑ Mehta, Jaswant Lal (২০০৫-০১-০১)। Advanced Study in the History of Modern India 1707-1813 (ইংরেজি ভাষায়)। Sterling Publishers Pvt. Ltd। আইএসবিএন 978-1-932705-54-6।
- ↑ S.R. Sharma। Mughal Empire in India: A Systematic Study Including Source Material। 3। পৃষ্ঠা 767।
- ↑ N. G. Rathod, The Great Maratha Mahadaji Scindia, (Sarup & Sons, 1994), 8:[১]