আরবিকরণ
আরবীকরণ বা আরবিকরণ বলতে কোনো একটি অনারব অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান আরবীয় সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তার করাকে বুঝায়। যার ফলে ঐ অঞ্চলের বাসিন্দারা একসময় আরবি ভাষায় কথা বলে এবং আরব সংস্কৃতি ধারণ করে। নিজেদের বিজিত অঞ্চলে আরবীয় খ্রিস্টান ও আরবি-ভাষী ইহুদিদের বিরোধিতায় আরবি ভাষা ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া ছিল সপ্তম শতাব্দীতে আরবীয় মুসলিমদের বিজয়গুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। ফলস্বরূপ আরব জাতির কিছু আদিম উপাদান বিজিত সভ্যতার উপাদানের সাথে নানা রূপ ও ডিগ্রিতে সদৃশ্য হয়ে যায় এবং সামগ্রিকভাবে আরবীয়র বিপরীতে আরব বলে পরিচিত হয়।
আরবীকরণ আধুনিক যুগেও অব্যাহত রয়েছে, সর্বাধিক সুস্পষ্টভাবে ইরাক,[১] সিরিয়া, সুদান,[২] মৌরিতানিয়া, আলজেরিয়া[২] এবং লিবিয়া এবং অন্যান্য অনারব-জনগোষ্ঠীর দ্বারা আরব পরিচয় ও সংস্কৃতি গ্রহণ করা হয়েছিল।
প্রতি-আরবীকরণ
[সম্পাদনা]ঐতিহাসিক প্রতিবর্তন
[সম্পাদনা]মাল্টায় মুসলিম আগ্রাসন (১০৯১)
[সম্পাদনা]মুসলিম হানাদাররা মাল্টা দ্বীপের মূল বসতি মদিনা অঞ্চলকে (আধুনিক মদিনা) ঘেরাও করেছিল, তবে স্থানীয় বাসিন্দারা শান্তি চুক্তি নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে সক্ষম হয়েছিল। চুক্তিস্বরূপ মুসলমানরা খ্রিস্টান বন্দীদের মুক্তি দিয়েছিলো, রজারের আনুগত্য স্বীকার এবং তাকে বার্ষিক শ্রদ্ধা নিবেদন করার শপথ করেছিলো। এরপর রজারের সেনাবাহিনী গোজোকে বরখাস্ত করে এবং মুক্ত হওয়া বন্দীদের নিয়ে সিসিলিতে ফিরে যায়।
যদিও আক্রমণটি কোনও বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন আনেনি, তবে এটি মাল্টার পুনরায় খ্রিস্টানীকরণের পথ প্রশস্ত করেছিলো, যা ১১২৭ সালে শুরু হয়েছিল। ফলে মাল্টাকে মুসলিমরা তাদের শাসনাধীনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি।
রিকনকুইস্টা (১২১২-১৪৯২)
[সম্পাদনা]আইবেরিয়ান উপদ্বীপে রিকনকুইস্টা আরবীকরণের ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। আরবীকরণ এবং ইসলামীকরণের প্রক্রিয়াটি স্থগিত ও বাধাগ্রস্ত হয়েছিল কারণ উপদ্বীপের উত্তরে বেশিরভাগ খ্রিস্টান রাজ্যগুলি ১২১২ সালে টলেডো এবং ১২৩৬ সালে কর্ডোভা জয় করেছিল।[৩] ১৪৯২ সালের জানুয়ারিতে গ্রানাডাকে যেমন জয় করা হয়েছিল, তেমনই উপদ্বীপে সর্বশেষ অবশিষ্ট আমিরাতও জয় করা হয়েছিল।[৪] পরে অধিকৃত অঞ্চলগুলোকে রোমানীকরণ ও খ্রিস্টানিকরণ করা হয়েছিল। যদিও সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য পূর্ববর্তী ভিজিগোথিক রাজ্যের চেয়ে ভিন্নধর্মী ছিল।
আধুনিক কালের প্রতি-আরবীকরণ
[সম্পাদনা]আধুনিক যুগে আরবীকরণের প্রক্রিয়াটিকে প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- ১৯২৯ সালে, কামালবাদী সংস্কারের অংশ হিসাবে তুরস্কে মুসলিম আগ্রাসন প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে আরবি হরফের পরিবর্তে লাতিন বর্ণমালা ব্যবহারের সূচনা হয়।
- ১৯৯২ সালে মেসোপটেমিয়ায় ইরাকি কুর্দিস্তান হিসাবে কুর্দি-অধ্যুষিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।
- ২০১২ সালে উত্তর সিরিয়ার বহু-জাতিগত ডেমোক্র্যাটিক ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেছে।[৫]
- বার্বারিজম হলো আলজেরিয়া, মরক্কো এবং মালি সহ বিস্তৃত উত্তর আফ্রিকাতে নৃগোষ্ঠী, ভৌগোলিক বা সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের একটি বার্বার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন। বার্বারিস্ট আন্দোলন ইসলামপন্থী সাংস্কৃতিক আরবীকরণ এবং সর্ব-আরবীয় রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধী এবং ধর্মনিরপেক্ষতার সাথেও জড়িত।
- ইরানে ফার্সি ভাষা থেকে আরবি কৃতঋণ শব্দগুলো সরিয়ে ফেলতে বা এমনকি আরবি হরফ ছেড়ে আলাদা লিপি (যেমন: ম্যানিচিয়ান বর্ণমালা) প্রচলনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চলছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মালয়ে আরবীকরণ বিরোধিতা
[সম্পাদনা]মালয়ে আরবীকরণকে জোহরের সুলতান ইব্রাহিম ইসমাইল ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন।[৬] তিনি ইসলামের অযুহাতে আরব সংস্কৃতি প্রবর্তনের পরিবর্তে মালয় সংস্কৃতি ধরে রাখার আহ্বান জানান।[৭] তিনি জনগণের উদ্দেশ্য মহিলাদের বোরকা পড়ানো, লিঙ্গভেদে করমর্দন এবং মালয় শব্দের পরিবর্তে আরবি শব্দ ব্যবহার না করার আহ্বান জানান।[৮] যারা মালয়ে আরব সংস্কৃতি চান তাদের গন্তব্য হিসাবে সৌদি আরবে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।[৯][১০] তিনি বলেছিলেন যে তিনি নিজে মালয় সংস্কৃতি মেনে চলেন। [১১][১২] আবদুল আজিজ বারী বলেছিলেন যে ইসলাম ও আরব সংস্কৃতি একে অপরের সাথে জড়িত। তিনি জোহর সুলতান যা বলেছেন তারও সমালোচনা করেছিলেন।[১৩] দাতুক হারিস কাসিমও এরূপ মন্তব্যের জন্য সুলতানের সমালোচনা করেছিলেন, তিনি সেলেঙ্গর ইসলাম ধর্মীয় বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[১৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- ইসলামে আরবি ভাষা
- আরবিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব
- আরবি বর্ণে বাংলা লিখন
- দোভাষী
- রওনক সাহিত্য সংস্থা
- সংস্কৃতায়ন (হিন্দুধর্ম)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Iraq, Claims in Conflict: Reversing Ethnic Cleansing in Northern Iraq. [১]
- ↑ ক খ Reynolds, Dwight F. (২ এপ্রিল ২০১৫)। The Cambridge Companion to Modern Arab Culture। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9780521898072।
- ↑ Carr, Karen (২০১৭-০৮-০৩)। "The Reconquista - Medieval Spain"। Quatr.us Study Guides (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩১।
- ↑ "The Conquest of Granada"। www.spanishwars.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-৩১।
- ↑ "After 52-year ban, Syrian Kurds now taught Kurdish in schools"। Al-Monitor। ৬ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ "Stop aping Arabs, Johor Sultan tells Malays"। Malay Mail Online। KUALA LUMPUR। ২৪ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "Stop trying to be like Arabs, Johor ruler tells Malays"। The Straits Times। JOHOR BARU। ২৪ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "Johor Sultan Says Be Malay Not Arab"। Asia Sentinel। ২৮ মার্চ ২০১৬।
- ↑ Zainuddin, Abdul Mursyid (২৪ মার্চ ২০১৬)। "Berhenti Cuba Jadi 'Seperti Arab' – Sultan Johor"। Suara TV। JOHOR BAHRU। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Sultan Johor Ajak Malaysia Jaga Tradisi Melayu, Bukan Arab"। TEMPO.CO। TEMPO.CO , Kuala Lumpu। ২৪ মার্চ ২০১৬।
- ↑ wong, chun wai (২৪ মার্চ ২০১৬)। "Stop trying to be like Arabs, Ruler advises Malays"। The Star Online। JOHOR BARU।
- ↑ "Stop aping Arabs, Johor Sultan tells Malays"। TODAYonline। KUALA LUMPUR। ২৪ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "Arab culture integral to Islam, Johor sultan advised"। malaysiakini। ২৪ মার্চ ২০১৬।
- ↑ Irsyad, Arief (৭ এপ্রিল ২০১৬)। "Is "Arabisation" A Threat To The Malay Identity As Claimed By The Johor Sultan? Here's What Some Malays Have To Say"। Malaysian Digest। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Genetic Evidence for the Expansion of Arabian Tribes into the Southern Levant and North Africa
- Bossut, Camille Alexandra. Arabization in Algeria : language ideology in elite discourse, 1962-1991 (Abstract) - PhD thesis, University of Texas at Austin, May 2016.